Infrastructure
ভারতের জাতীয় সড়কের নতুন সংজ্ঞা- উদ্ভাবনী শক্তিকে চালিত করে সংযোগ স্থাপন
Posted On:
11 NOV 2025 1:47PM
১১ নভেম্বর ২০২৫
মূলবিষয়
পরিকল্পনা থেকে শুরু করে টোল আদায়ের প্রতিটি ধাপে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় সড়কগুলি এখন কেবল ভৌত সম্পত্তি নয়, বরং তথ্যনির্ভর সম্পদে রূপান্তরিত হচ্ছে। 'ফাস্ট্যাগ' ব্যবস্থা প্রায় ৯৮% ব্যবহারকারীর মধ্যে পৌঁছে গিয়ে এবং ৮ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারীর সঙ্গে দেশের বৈদ্যুতিন টোল সংগ্রহ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এছাড়াও, ১৫ লক্ষেরও বেশি ডাউনলোড হওয়া 'রাজমার্গযাত্রা' অ্যাপটি যাত্রীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে ভারতের সেরা হাইওয়ে ট্র্যাভেল অ্যাপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
আধুনিক যুগের সড়কপথের নতুন দিগন্ত উন্মোচন
ডিজিটাল বিপ্লবের এই যুগে, ভারতের জাতীয় সড়কগুলি এখন শুধুমাত্র পিচ বা কংক্রিটের রাস্তা নয়; তারা গতিশীলতা ও তথ্যের বুদ্ধিদীপ্ত মেরুদণ্ড হিসেবে বিবর্তিত হচ্ছে, যা বাধাহীন পরিবহন এবং সঠিক সময়ের তথ্য প্রবাহকে সম্ভব করে তুলছে। স্মার্ট নেটওয়ার্কের এই ধারণা আমাদের ভ্রমণ, পণ্য পরিবহন, টোল ব্যবস্থাপনা এবং চলার পথে ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতিকে নতুন করে সাজাচ্ছে। একসময় যে সড়কগুলিকে কেবল শহর ও রাজ্যগুলির মধ্যেকার ভৌত সংযোগকারী হিসেবে দেখা হত, সেগুলিকে এখন আর শুধুমাত্র যানবাহনের জন্য নয়, বরং তথ্য, যোগাযোগ এবং সঠিক সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তৈরি সংযোগ ও নিয়ন্ত্রণের স্মার্ট করিডোর হিসেবে পুনরায় কল্পনা করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের পরিধি জাতীয় সড়ক ব্যবস্থার মতই বিশাল। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত, ভারতের সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৩ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক ব্যবস্থা। এর মধ্যে, জাতীয় সড়কপথ সংযোগের দৈর্ঘ্য ২০১৪-১৫ সালের ৯১,২৮৭ কিলোমিটার থেকে বেড়ে বর্তমানে ১,৪৬,২০৪ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে, যা প্রায় ৬০% বৃদ্ধির এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। শুধুমাত্র ২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে, দেশে ৫৪,৯১৭ কিলোমিটার নতুন জাতীয় সড়ক যুক্ত হয়েছে, যা কেবল নির্মাণের দক্ষতারই প্রমাণ নয়, বরং এত বড় সম্পদকে ডিজিটালভাবে পরিচালিত ও পর্যবেক্ষণ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কাজকে সুবিন্যস্ত করার লক্ষ্যে সরকার একটি হাইওয়ে প্রকল্পের জীবনচক্রের সমস্ত প্রধান ধাপে একটি সামগ্রিক ৩৬০ডিগ্রি ডিজিটাল রূপান্তর গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনা, বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরি, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায় এবং সংযোগের আধুনিকীকরণ - এই সব মূল প্রক্রিয়াগুলিকে সুবিন্যস্ত করা হচ্ছে যাতে ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ে এবং ব্যবসা করার সুবিধা বৃদ্ধি পায়।
ডিজিটাল টোল আদায় ও পেমেন্ট সংস্কার
কাগজের টিকিট এবং নগদ টাকার টোল বুথ থেকে শুরু করে সেন্সর-নির্ভর নির্বিঘ্ন ভ্রমণ - ভারতের জাতীয় সড়কগুলিতে এখন একটি নীরব বিপ্লব চলছে। অপেক্ষার সময় কমানো, জ্বালানির অপচয় হ্রাস করা এবং রাজস্বের ক্ষতি বন্ধ করার লক্ষ্যে, দেশ প্রথম ডিজিটাল সমাধানগুলির মাধ্যমে তার টোল সংগ্রহের ব্যবস্থাকে ক্রমাগত ঢেলে সাজাচ্ছে।
একটি ট্যাগ,সমস্ত রাস্তা: ফাস্ট্যাগ এবং নেটসি টোল পেমেন্টকে শক্তি জোগাচ্ছে
ভারতের জাতীয় সড়কগুলিতে টোল আদায় ব্যবস্থাকে সুবিন্যস্ত করার জন্য ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যা বৈদ্যুতিন টোল পেমেন্টের জন্য একটি সমন্বিত, ইন্টারঅপারেবল প্ল্যাটফর্ম। এই ব্যবস্থাটি নিষ্পত্তির এবং বিরোধ সমাধানের জন্য একটি কেন্দ্রীভূত ক্লিয়ারিং হাউসের মাধ্যমে নির্বিঘ্ন লেনদেনকে সহজ করে তোলে।

ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশনের কেন্দ্রে রয়েছে ফাস্ট্যাগ, যা একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ভিত্তিক যন্ত্র - যা গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে লাগানো থাকে। এর ফলে টোল প্লাজায় না থেমে ব্যবহারকারীর লিঙ্ক করা অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল পেমেন্ট করতে পারে। এই প্রক্রিয়া এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকার কারণে, ফাস্ট্যাগ নিশ্চিত করে যে যাত্রীরা টোল প্লাজা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অপারেটর নির্বিশেষে দেশের যেকোনো টোল বুথে একটি মাত্র ট্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। প্রায় ৯৮% ব্যবহারকারীর মধ্যে পৌঁছে গিয়ে এবং ৮ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে, ফাস্ট্যাগ সারা দেশে বৈদ্যুতিন টোল সংগ্রহ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে।
ভারতের জাতীয় সড়কে ঝঞ্ঝাটহীন ভ্রমণের জন্য চালু করা হয়েছে ফাস্ট্যাগ বার্ষিক পাস। এটি অ-বাণিজ্যিক যানবাহনগুলির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এই পাসটি এককালীন ৩,০০০ টাকা দিয়ে কেনা যায়, যা এক বছর অথবা জাতীয় সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ের ১১৫০টি টোল প্লাজার মধ্যে দিয়ে ২০০ বার টোল প্লাজা অতিক্রম করা পর্যন্ত বৈধ। 'রাজমার্গযাত্রা' অ্যাপ বা এনএইচএআই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে সক্রিয় হওয়া এই পাসটি ঘন ঘন রিচার্জ করার প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যার ফলে হাইওয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নির্বিঘ্ন ও কার্যকর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হয়। ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে এটি চালু হওয়ার পর মাত্র দুই মাসের মধ্যে সমগ্র দেশে এর মাধ্যমে প্রায় ৫.৬৭ কোটি লেনদেন রেকর্ড করা হয়েছে এবং এটি পঁচিশ লক্ষ ব্যবহারকারীর মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা ঝঞ্ঝাটহীন টোল পেমেন্টের জন্য প্রবল চাহিদাকে প্রতিফলিত করে।
টোল প্লাজাগুলিতে ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করতে এবং নগদ লেনদেন কমাতে সরকার ২০২৫ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ন্যাশনাল হাইওয়েজ ফি রুলস, ২০০৮ সংশোধন করেছে। সংশোধিত নিয়ম অনুসারে, ফাস্ট্যাগবিহীন ব্যবহারকারীরা নগদে টোল দিলে তাঁদের স্বাভাবিক টোল ফি-র দ্বিগুণ চার্জ করা হবে, আর যাঁরা ইউপিআই পেমেন্টের মাধ্যমে দেবেন তাঁদের টোলের ১.২৫ গুণ দিতে হবে। এর মূল লক্ষ্য হল টোল সংগ্রহকে সুবিন্যস্ত করা, যানজট কমানো এবং জাতীয় সড়কগুলিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও সুবিধা আনা। ২০২৫ সালের অগাস্ট মাসে, ভারত গুজরাটের NH-48-এর চোর্যাসি ফি প্লাজায় তার প্রথম মাল্টি-লেন ফ্রি ফ্লো টোলিং সিস্টেম চালু করেছে। এটি একটি বাধামুক্ত, ক্যামেরা এবং আরএফআইডি-ভিত্তিক ব্যবস্থা যা চলতে থাকা অবস্থায় ফাস্ট্যাগ এবং গাড়ির নম্বর পড়তে পারে। এই ব্যবস্থার ফলে গাড়ি না থামিয়ে নির্বিঘ্নে টোল সংগ্রহ করা যায়, যা যানজট কমায়, জ্বালানি সাশ্রয় করে এবং দূষণ হ্রাস করে।
রাজমার্গযাত্রা: সড়ক ভ্রমণকে আরও দুর্দান্ত এবং মসৃণ করে তোলা

সারা ভারতে সড়কপথ ভ্রমণের নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে, সরকার জাতীয় সড়কগুলিতে যাত্রীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে নাগরিক-কেন্দ্রিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন 'রাজমার্গযাত্রা' চালু করেছে। ব্যবহারকারীর সুবিধার বিষয়টি কেন্দ্রে রেখে তৈরি করা এই অ্যাপটি একদম সঠিক সময়ের তথ্য সরবরাহ এবং কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ওয়েব-ভিত্তিক ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত।
'রাজমার্গযাত্রা' একটি ডিজিটাল ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে কাজ করে, যা হাইওয়ে সংক্রান্ত বহু তথ্য যেমন - টোল প্লাজা, পেট্রোল পাম্প, হাসপাতাল, ইভি চার্জিং স্টেশন এবং এমনকি আবহাওয়ার লাইভ আপডেট সহ কাছাকাছি সুযোগ-সুবিধাগুলির বিশদ বিবরণ সরবরাহ করে। এই বিস্তৃত তথ্য নাগরিকদেরকে ভ্রমণের বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে এবং কার্যকরভাবে নিজেদের যাত্রার পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। একটি মসৃণ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য, এই অ্যাপটি ঝঞ্ঝাটহীন টোল পেমেন্টের জন্য ফাস্ট্যাগ পরিষেবাগুলির সঙ্গে সমন্বিত এবং বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এটি একাধিক ভাষা সমর্থন করে। সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, অ্যাপটিতে গতিসীমার সতর্কতা এবং কন্ঠস্বর সহকারীর মত বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা দীর্ঘ পথে দায়িত্বশীল ড্রাইভিং অভ্যাসকে উৎসাহিত করে।
এটির একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হল এর ব্যবহারকারী-বান্ধব অভিযোগ ব্যবস্থা। ভ্রমণকারীরা খুব দ্রুত জিও-ট্যাগযুক্ত ছবি বা ভিডিও আপলোড করে রাস্তার গর্ত, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা, অবৈধ কাঠামো অথবা সুরক্ষার ঝুঁকি সংক্রান্ত হাইওয়ে-সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার রিপোর্ট করতে এবং তাদের অভিযোগের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারেন। এটি কেবল দায়বদ্ধতাকেই উন্নত করে না, বরং সড়ক পরিকাঠামো ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতাও বৃদ্ধি করে।
'রাজমার্গযাত্রা' অ্যাপটি ভারতীয় যাত্রীদের মধ্যে দ্রুত আকর্ষণ লাভ করেছে, গুগল প্লে স্টোরের সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ২৩-তম স্থানে এবং ভ্রমণ বিভাগে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বলা যায় ১৫ লক্ষেরও বেশি ডাউনলোড এবং ৪.৫ স্টারের একটি চিত্তাকর্ষক ব্যবহারকারী রেটিং-সহ, অ্যাপটি সারা দেশের হাইওয়ে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল সরঞ্জাম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে, ফাস্ট্যাগ বার্ষিক পাস বৈশিষ্ট্যটি চালু হওয়ার মাত্র চার দিনের মধ্যেই রাজমার্গযাত্রা দেশের শীর্ষ-কার্যকরী সরকারি অ্যাপে পরিণত হয়, যা এর গ্রহণ এবং প্রভাবের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্যকে চিহ্নিত করে।
এনএইচএআই ওয়ান : হাইওয়েগুলির ডিজিটাল মেরুদণ্ড
পরিচালনগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির সময়মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে, ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া 'এনএইচএআই ওয়ান' মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করেছে। এটি একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম যা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলিকে সুবিন্যস্ত করে এবং জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের সমন্বয় বাড়ায়। এনএইচএআই ওয়ান - প্রকল্প পরিচালনার পাঁচটি মূল ক্ষেত্রকে একত্রিত করেছে: তৃণমূল স্তরের কর্মীদের উপস্থিতি, হাইওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ, সড়কপথ সুরক্ষা নিরীক্ষা, শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিদর্শনের অনুরোধের মাধ্যমে দৈনিক নির্মাণ নিরীক্ষা। এই সমস্ত কাজকে একটি মাত্র ডিজিটাল ইন্টারফেসে একীভূত করার মাধ্যমে, অ্যাপটি তৃণমূল স্তরের দল এবং তদারকি কর্মীদের আরও কার্যকরভাবে এবং সঠিক সময়ে কাজগুলি পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয়।
আঞ্চলিক আধিকারিক এবং প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার, নিরাপত্তা অডিটর, এবং টোল প্লাজার শৌচাগার সুপারভাইজার পর্যন্ত - এই অ্যাপটি একেবারে প্রান্তিক স্তরের ব্যবহারকারীদের একদম শুরু থেকেই সরাসরি প্রকল্প-সম্পর্কিত কার্যকলাপগুলি রিপোর্ট করতে, আপডেট করতে এবং ট্র্যাক করতে সাহায্য করে। জিও-ট্যাগিং এবং টাইম-স্ট্যাম্পিং-এর মতো বৈশিষ্ট্যগুলির সাহায্যে, এনএইচএআই ওয়ান দায়বদ্ধতা বাড়ায় এবং সাইটে কাজের অগ্রগতি ও সম্মতি-পালনের সঠিক ডকুমেন্টেশন নিশ্চিত করে। অভ্যন্তরীণ দক্ষতা উন্নত করার পাশাপাশি, পরিকাঠামো সমস্যাগুলিতে দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং হাইওয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলির মসৃণ বাস্তবায়ন সক্ষম করার মাধ্যমে এই অ্যাপটি প্রকল্প কার্যকরী এবং জনমুখী পরিষেবা সরবরাহের মধ্যেকার ব্যবধান পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতের সড়কপথের মানচিত্র তৈরি : জিআইএস এবং পিএমগতি শক্তির ভূমিকা

ডিজিটাল মানচিত্র এবং স্থান সংক্রান্ত বুদ্ধি হাইওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা ও পদ্ধতিকে নতুন করে সাজাচ্ছে। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা এবং ভারত সরকারের প্রধান উদ্যোগ পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যানের শক্তিশালী সমন্বয়। ভারতে পরিকাঠামো উন্নয়নের, বিশেষ করে হাইওয়ের, ডিজিটাল কম্যান্ড সেন্টার হিসেবে দ্রুত পরিচিতি লাভ করছে এনএমপি পোর্টালটি, যা সমন্বিত, মাল্টিমোডাল সংযোগের জন্য একটি বিস্তৃত ডিজিটাল অ্যাটলাস হিসেবে কাজ করে। এর কেন্দ্রে রয়েছে একটি শক্তিশালী জিআইএস-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যা অর্থনৈতিক ক্লাস্টার, লজিস্টিক হাব, সামাজিক পরিকাঠামো, পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যসহ ৫৫০টিরও বেশি লাইভ ডেটার স্তর ধারণ করে। এই স্পষ্টতার সাহায্যে, সড়কের বিন্যাস ন্যূনতম বাধা, সর্বাধিক দক্ষতা এবং দ্রুত ছাড়পত্র নিয়ে পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে।
একটি প্রধান মাইলফলক হিসেবে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক সম্পূর্ণ জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের (প্রায় ১.৪৬ লক্ষ কিলোমিটার) তথ্য জিআইএস-ভিত্তিক এনএমপি পোর্টালে আপলোড ও বৈধতা দিয়েছে। এটি ভারতে হাইওয়েগুলির পরিকল্পনা ও কার্যকরীকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে - যা খণ্ডিত, কাগজ-ভিত্তিক প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে দেশব্যাপী দৃশ্যমানতার সঙ্গে ভৌগোলিক-বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে গেল।
প্রযুক্তি চালিত বুদ্ধিদীপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা
যখন আমরা প্রযুক্তি-চালিত করিডরগুলির কথা বলি, তখন সড়ক বা ফুটপাত কেবল অর্ধেক গল্প। বাকি অর্ধেকটি রয়েছে সেই সব ব্যবস্থায় যা একসঙ্গে অনুভব করে, বিশ্লেষণ করে, বলবৎ করে এবং প্রতিক্রিয়া জানায়, যা সম্মিলিতভাবে বুদ্ধিদীপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা নামে পরিচিত। ভারতে আইটিএস প্রাথমিকভাবে উন্নত ট্র্যাফিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যকর করা হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে এটিকে একটি বৃহত্তর ভেহিকেল-টু-এভরিথিং যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে একত্রিত করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থাগুলি মূলত সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে, ট্র্যাফিক লঙ্ঘনকে কমাতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে, ট্রান্স-হরিয়ানা এক্সপ্রেসওয়ে এবং ইস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ের মত প্রধান এক্সপ্রেসওয়েগুলিতে উন্নত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে, যা দ্রুত ঘটনা শনাক্ত করতে এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার সময়কে সম্ভব করে তুলেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নতুন উচ্চ-গতির জাতীয় সড়ক প্রকল্পগুলিতে এখন এটিএমএস স্থাপন করা একটি স্বাভাবিক উপাদান এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যমান করিডরগুলিতেও স্বাধীন ব্যবস্থা হিসেবে মানিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের সড়কগুলি বুদ্ধিমত্তার দিকে মোড় নিচ্ছে। বেঙ্গালুরু-মহীশূর এক্সপ্রেসওয়ের মত করিডরগুলিতে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অ্যাডভান্সড ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট কার্যকর হওয়ার পরে দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা প্রমাণ করে যে স্মার্ট প্রয়োগ জীবন রক্ষা করছে।

সরকার স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে হাইওয়ের স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করছে। এর জন্য তারা কিউআর কোড-সহ প্রোজেক্ট ইনফরমেশন সাইন বোর্ড চালু করছে, যাতে সঠিক সময়ের প্রকল্পের বিশদ বিবরণ, জরুরি হেল্পলাইন এবং হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্প ও ই-চার্জিং স্টেশনের মত কাছাকাছি সুযোগ-সুবিধার তথ্য থাকবে। একই সঙ্গে, নেটওয়ার্ক সার্ভে ভেহিকল, যা 3D লেজার সিস্টেম এবং 360° ক্যামেরায় সজ্জিত, তা দেশের ২৩-টি রাজ্যে ২০,৯৩৩ কিলোমিটার জুড়ে মোতায়েন করা হবে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তার ত্রুটি শনাক্ত করা যাবে, যা যাত্রার অভিজ্ঞতাকে আরও মসৃণ, নিরাপদ এবং তথ্যসমৃদ্ধ করে তুলবে।
আগামীর সবুজ পথ : স্থিতিশীল পরিকাঠামোর প্রতি অঙ্গীকার
স্থিতিশীল পরিকাঠামোর প্রতি ভারতের অঙ্গীকার গ্রিন হাইওয়েজ (প্ল্যান্টেশন, ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, বিউটিফিকেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ) নীতি, ২০১৫-এর অধীনে চালু হওয়া গ্রিন হাইওয়ে মিশনে প্রতিফলিত হয়। এর উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে দূষণ ও শব্দ কমানো, মাটির ক্ষয় রোধ করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ২০২৩-২৪ সালে ৫৬ লক্ষেরও বেশি চারাগাছ রোপণ করেছিল, এবং তার পরে ২০২৪-২৫ সালে আরও ৬৭.৪৭ লক্ষ চারা রোপণ করেছে। সম্মিলিতভাবে, এই প্রয়াসের ফলে মিশনটি শুরু হওয়ার পর থেকে জাতীয় সড়কগুলির পাশে রোপণ করা মোট গাছের সংখ্যা ৪.৬৯ কোটিরও বেশি হয়েছে, কিন্তু এই সবুজ রূপান্তর কেবল চারা রোপণেই সীমাবদ্ধ নয়।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ হাইওয়েগুলির পাশে জলাশয়গুলিকে পুনরুদ্ধার করার দিকেও মনোযোগ দিয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে চালু হওয়া মিশন অমৃত সরোবরের অধীনে, তারা সারা ভারতে ৪৬৭-টি জলাশয় তৈরি করেছে। এই উদ্যোগ স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে এবং হাইওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ২.৪ কোটি ঘনমিটার মাটি সরবরাহ করেছে, যার ফলে আনুমানিক ১৬,৬৯০ কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে, NHAI জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য ৬৩১ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি পুনর্ব্যবহৃত উপাদান যেমন ফ্লাই অ্যাশ, প্লাস্টিক বর্জ্য এবং পুনরায় ব্যবহৃত অ্যাসফাল্ট ব্যবহার করেছে, যা পরিবেশবান্ধব ও স্থিতিশীল নির্মাণকে উৎসাহিত করছে।
চিরাচরিত হাইওয়ের বাইরে
ভারতের হাইওয়েগুলি পরিবহনের ইঞ্জিন থেকে রূপান্তরের ইঞ্জিনে বিবর্তিত হচ্ছে। শহরগুলিকে সংযুক্ত করার যে লক্ষ্য নিয়ে এর শুরু হয়েছিল, তা এখন একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রচেষ্টায় পরিণত হয়েছে - স্মার্ট, স্থিতিশীল এবং ডিজিটালভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিকাঠামোর একটি জালের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবস্থা, মানুষ, তথ্য এবং সিদ্ধান্তগুলিকে সংযুক্ত করা। জিআইএস-চালিত পরিকল্পনা, বুদ্ধিদীপ্ত ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, ডিজিটাল টোলিং এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক অ্যাপগুলির সমন্বয়ের ফলে হাইওয়ে নেটওয়ার্কটি এখন এমন একটি কাঠামোতে পরিণত হয়েছে যা সঠিক সময়ে অনুভব করে, প্রতিক্রিয়া জানায় এবং শিক্ষা নেয়। প্রতিটি এক্সপ্রেসওয়ে এখন সংযোগের পথ এবং জাতীয় বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্র হিসেবে দ্বিগুণ ভূমিকা পালন করছে, যা নিশ্চিত করছে যে ভারতে গতিশীলতা কেবল দ্রুতই নয়, বরং আরও নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং স্বচ্ছ। প্রতিটি কিলোমিটার কেবল ট্র্যাফিক বহন করে না; এটি বহন করে বিশ্বাস, প্রযুক্তি এবং রূপান্তর।
তথ্যসূত্র
Ministry of Road Transport & Highways
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2174761
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2174411
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2159700
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2157694
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2156992
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2139029
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=2115576
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2100383
https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1945405
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2122700
https://www.pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=2091508
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2111288
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2110972
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2081193
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2162163
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2122632
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2178596
https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2144860
Press Information Bureau
https://www.pib.gov.in/PressNoteDetails.aspx?NoteId=154624&ModuleId=3
National Payments Corporation of India
https://www.npci.org.in/product/netc/about-netc
Click here for pdf file
SSS/AS....
(Backgrounder ID: 155987)
Visitor Counter : 8
Provide suggestions / comments