• Skip to Content
  • Sitemap
  • Advance Search
Infrastructure

সমুদ্র ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি

২০৩০ সালের লক্ষ্য থেকে ২০৪৭ সালের অমৃত কাল পর্যন্ত

Posted On: 26 OCT 2025 9:49AM

নয়াদিল্লি,অক্টোবর ২৬, ২০২৫ 

 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

আয়তনের দিক থেকে ভারতের বাণিজ্যের প্রায় ৯৫% এবং মূল্যের দিক থেকে প্রায় ৭০% সামুদ্রিক পথে সম্পন্ন হয়, যা দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রের  গুরুত্বকে তুলে ধরে।

ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০-এ ১৫০-টিরও বেশি উদ্যোগের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ৩-৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার আনুমানিক বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। জাহাজ নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ৬৯,৭২৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে, প্রধান বন্দরগুলি প্রায় ৮৫৫ মিলিয়ন টন পণ্য পরিচালনা করেছে, যা সামুদ্রিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য এবং বন্দরগুলির দক্ষতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে।

ভারতের সমুদ্রপথের দিশা নির্ধারণ

ভারতবর্ষের আর্থিক শক্তির স্রোত বয়ে চলেছে মহাসাগরজুড়ে। দেশের বাণিজ্যের আয়তনের দিক থেকে প্রায় ৯৫% এবং মূল্যের দিক থেকে প্রায় ৭০% এখনও দেশের সামুদ্রিক পথ দিয়েই পারাপার করে, যা ভারতের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে সমুদ্রের ভূমিকাকে তুলে ধরে। অপরিশোধিত তেল ও কয়লা থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিন দ্রব্য, বস্ত্র এবং কৃষি পণ্য পর্যন্ত - আমদানি ও রপ্তানির বিশাল অংশ ব্যস্ত বন্দরগুলি দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা ভারতকে সারা বিশ্বের বাজারের সঙ্গে যুক্ত করে। বিশ্বায়ন যত শৃঙ্খলা সরবরাহর আন্তঃনির্ভরতাকে বাড়াচ্ছে, আর ভারত যত একটি প্রধান উৎপাদন ও শক্তি কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে, ঠিক ততটাই বন্দর ও জাহাজ পরিবহণের দক্ষতা দেশের জাতীয় প্রতিযোগিতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

ভারত নিজেকে একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে ২০২১ সালে 'ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০'  নামে একটি রূপান্তরমূলক পথচিত্র চালু করেছে। ১৫০-টিরও বেশি কৌশলগত উদ্যোগের মাধ্যমে, এই পরিকল্পনাটি বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ, জাহাজ পরিবহন ক্ষমতা সম্প্রসারণ এবং অভ্যন্তরীণ জলপথকে শক্তিশালী করতে চায়, যার কেন্দ্রে রয়েছে স্থায়িত্ব ও দক্ষতা উন্নয়ন। কেবল পণ্য পরিবহণের একটি পরিকল্পনা না হয়ে এটি বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের একটি অনুঘটক, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের পথ নির্ধারণ করছে।

এমআইভি ২০৩০ এর মূল বিষয় 

'ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০' ১০-টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু চিহ্নিত করেছে, যা ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পথে চালিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশকে অগ্রভাগে স্থান দেবে।

ইন্ডিয়া মেরিটাইম উইক ২০২৫  বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক জগতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, যা ২৭ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত মুম্বই-এর নেসকো প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

শিপিং, বন্দর এবং ব্যবস্থাপনা জগতের মূল অংশীদারদের একত্রিত করে, এটি আলোচনা, সহযোগিতা এবং ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলগত মঞ্চ হিসাবে কাজ করবে। এই অনুষ্ঠানে ১০০-টিরও বেশি দেশ থেকে ১ লক্ষেরও বেশি প্রতিনিধি, বন্দর পরিচালনাকারী, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক এবং নীতিনির্ধারকরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পাঁচ দিনের এই অনুষ্ঠানে ৫০০ জন প্রদর্শক, থিমেটিক প্যাভিলিয়ন, প্রযুক্তি প্রদর্শন এবং বন্দর-নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন, জাহাজ নির্মাণ ক্লাস্টার ও ডিজিটাল করিডোর সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগ থাকবে।

সমুদ্রপথের রূপান্তরের এক দশক: ২০১৪ থেকে ২০২৫

অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য এক নতুন পথ তৈরি করে, ভারতের সামুদ্রিক ক্ষেত্রটি বন্দর, উপকূলীয় জাহাজ পরিবহন এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ জুড়ে রেকর্ড পরিমাণ কাজের সঙ্গে  এগিয়ে চলেছে। এই ক্ষেত্রের অগ্রগতি দেশের শক্তি বৃদ্ধিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি তুলে ধরে।

ভারতের বন্দরগুলির নতুন কৃতিত্বের নজির স্থাপন

ভারতের বন্দর ক্ষেত্রটি একটি রূপান্তরমূলক উন্নয়ন দেখেছে। আধুনিকীকরণ ও পরিকাঠামোতে বড় বিনিয়োগের ফলে মোট বন্দরের ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১,৪০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্রতি বছর  থেকে ২,৭৬২ এমএমটিপিএ-তে পৌঁছেছে।

পণ্য পরিচালনার পরিমাণ ৯৭২ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে নজরকাড়া ভাবে বেড়ে ১,৫৯৪ এমএমটি হয়েছে। এটি সামুদ্রিক বাণিজ্য ও বন্দরের দক্ষতায় শক্তিশালী বৃদ্ধিকে  চিহ্নিত করে, যেখানে প্রধান বন্দরগুলি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে প্রায় ৮৫৫ মিলিয়ন টন পণ্য পরিচালনা করেছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ছিল ৮১৯ মিলিয়ন টন।

পরিচালনাগত কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, কারণ জাহাজের গড় টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম ৯৩ ঘণ্টা থেকে কমে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় নেমে এসেছে, যা সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাকে বাড়িয়েছে।

এই ক্ষেত্রের আর্থিক শক্তি বহুলাংশে বেড়েছে; নিট বার্ষিক উদ্বৃত্ত ১,০২৬ কোটি টাকা থেকে মারাত্মকভাবে বেড়ে ৯,৩৫২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা উন্নত রাজস্ব আদায় এবং খরচ ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়াও, দক্ষতার সূচকগুলিও শক্তিশালী হয়েছে। কার্যকরী অনুপাত ৭৩% থেকে উন্নত হয়ে ৪৩%-এ দাঁড়িয়েছে, যা সুস্থায়ী ও লাভজনক বন্দর পরিচালনার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।

ভারতীয় নৌবহর, ক্ষমতা এবং কর্মীবাহিনী বাড়াচ্ছে

ভারতের জাহাজ পরিবহন ক্ষেত্রটি ধারাবাহিক অগ্রগতি দেখিয়েছে; ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ১,২০৫ থেকে বেড়ে ১,৫৪৯-এ পৌঁছেছে, যা দেশের বর্ধিত সামুদ্রিক উপস্থিতি তুলে ধরে।

ভারতীয় ফ্লিটের মোট টনেজ  ১০ মিলিয়ন গ্রস টন থেকে বেড়ে ১৩.৫২ মিলিয়ন গ্রস টন হয়েছে, যা একটি শক্তিশালী ও আরও সক্ষম জাহাজ পরিবহন ক্ষমতাকে জোর দেয়।

উপকূলীয় জাহাজ পরিবহন  দৃষ্টান্তমূলক গতি লাভ করেছে; পণ্য চলাচল প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৮৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে ১৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে  পৌঁছেছে। এটি দক্ষ, কম খরচের, এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন পদ্ধতির দিকে পরিবর্তনের বিষয়টিকে আরও শক্তিশালী করছে।

ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে

অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহন ক্ষেত্রের এক ঐতিহাসিক উন্নয়নের ধারায়, ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণ কতৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ২০১৪ সালের ১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে পণ্য চলাচল বেড়ে ২০২৫ সালে রেকর্ড ১৪৬ মিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছে, যা প্রায় ৭১০ শতাংশ বৃদ্ধি।

কার্যকর  জলপথের সংখ্যাও তিনটি থেকে দৃষ্টান্তমূলক ভাবে বেড়ে ২৯-টি হয়েছে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহন  সংযোগে একটি বড় অগ্রগতি তুলে ধরে।

ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া হলদিয়া মাল্টি-মোডাল টার্মিনাল-এর দায়িত্ব আইআরসি প্রাকৃতিক উৎসতে হস্তান্তর করেছে। এটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের অধীনে অভ্যন্তরীণ জলপথের পরিকাঠামো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বহুমুখী ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের এই টার্মিনালটির ক্ষমতা হল বার্ষিক ৩.০৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ।

ফেরি এবং রো-প্যাক্স (যা গাড়ি ও যাত্রী উভয়ই বহন করে) পরিবহনও গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ লাভ করেছে, যা ২০২৪–২৫ সালে ৭.৫ কোটিরও বেশি যাত্রী বহন করেছে। এটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্রমণের জন্য জল-ভিত্তিক পরিবহনকে জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান গ্রহণকে প্রতিফলিত করে।

মাত্র এক দশকে ভারতের নাবিকের সংখ্যা ১.২৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ৩ লক্ষের বেশি হয়েছে। বর্তমানে তারা বিশ্বের মোট নাবিক কর্মীর ১২ শতাংশ, যা ভারতকে প্রশিক্ষিত নাবিকদের জন্য বিশ্বের শীর্ষ তিনটি সরবরাহকারীর মধ্যে স্থান দিয়েছে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে, জাহাজ পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা এবং এই সম্পর্কিত সামুদ্রিক শিল্পগুলিতে বিশাল সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে।

সমুদ্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ: সহায়তা এবং উদ্ভাবন

ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০ বন্দর, শিপিং এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ জুড়ে মোট ৩-৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। জাহাজ নির্মাণকে উৎসাহিত করতে এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সম্প্রতি অনুমোদিত ৬৯,৭২৫ কোটি টাকার সমর্থনে, ভারত তার বিশাল উপকূলরেখাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব সামুদ্রিক মানচিত্রে নিজেকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি কৌশলগত পথ তৈরি করছে। এই লক্ষ্যযুক্ত বরাদ্দ এবং কৌশলগত উদ্যোগগুলি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা আনুমানিক বিনিয়োগকে কার্যকরী পদক্ষেপে রূপ দিচ্ছে।

২৫,০০০ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে গঠিত ম্যারিটাইম ডেভলপমেন্ট ফান্ড  ভারতের শিপিং টনেজ এবং জাহাজ নির্মাণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন সরবরাহ করতে প্রস্তুত। এর পরিপূরক হিসেবে, ২৪,৭৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা শিপবিল্ডিং ফিনান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স স্কিম  দেশীয় খরচের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করবে এবং জাহাজ-ভাঙাকে উৎসাহিত করবে। অন্যদিকে, শিপবিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট স্কিম ১৯,৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রিনফিল্ড ক্লাস্টার, ইয়ার্ড বা অঙ্গন সম্প্রসারণ এবং এই কাজের ঝুঁকিকেও চালিত করবে। এর পাশাপাশি, বিশাখাপত্তনমে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ইন্ডিয়ান শিপ টেকনোলজি সেন্টার  জাহাজ ডিজাইন, গবেষণা ও উন্নয়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দক্ষতা উন্নয়নের একটি জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ সংযোগের মাধ্যমে পরিবহন ও বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথের পরিকাঠামো উন্নয়নে ১,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, এবং বাকি কাজ শেষের পথে, যা এই অঞ্চলে যোগাযোগ এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে গতি আনবে।

এছাড়াও, এই অঞ্চলের পর্যটনের বড় উন্নতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বর্তমানে কলকাতার হাওড়ায় - হুগলি কোচিন শিপইয়ার্ডে ২৫০ কোটি টাকার সম্মিলিত বিনিয়োগে দুটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী  তৈরি হচ্ছে। ২০২৭ সালে চালু হওয়ার কথা থাকা এই জাহাজগুলি ব্রহ্মপুত্র নদে চলাচল করবে এবং সরকারের 'ক্রুজ ভারত মিশন'-এর অধীনে অসমের নদী পর্যটনের দৃশ্যপটকে বদলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য নেওয়া সাগরমালা কার্যক্রম হল ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০ এবং ম্যারিটাইম অমৃত কাল ভিশন ২০৪৭-এর একটি মূল ভিত্তি।

এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হল ব্যবস্থাপনা খরচ কমানো, বাণিজ্যের দক্ষতা বাড়ানো, এবং আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন সংযোগে মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা। এর অধীনে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫.৮ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ৮৪০-টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার মধ্যে ১.৪১ লক্ষ কোটি টাকার ২৭২-টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে এবং ১.৬৫ লক্ষ কোটি টাকার ২১৭-টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

ভবিষ্যতের অভিমুখে যাত্রা

ভারতের সামুদ্রিক ক্ষেত্রটি একটি নির্ণায়ক দশকে প্রবেশ করছে, যেখানে নতুন আইন, মেগা প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০-কে আকার দিচ্ছে। হরিঅৎ প্রযুক্তি ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের ওপর দৃঢ় মনোযোগ দিয়ে ভারত শুধু তার বাণিজ্যের চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, বরং সামুদ্রিক ক্ষেত্রে এক নেতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, লক্ষ্য অমৃত কাল  ২০৪৭, যা ভারতের সামুদ্রিক পুনরুত্থানের একটি দীর্ঘমেয়াদী পথরেখা। বন্দর, উপকূলীয় জাহাজ পরিবহন, অভ্যন্তরীণ জলপথ, জাহাজ নির্মাণ এবং হরিৎ জাহাজ চলাচল উদ্যোগে প্রায় ৮০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার গ্রীন করিডোর বা হরিৎ অলিন্দ স্থাপন করে, প্রধান বন্দরগুলিতে সবুজ হাইড্রোজেন বাঙ্কারিং চালু করে এবং মিথানল-চালিত জাহাজ ব্যবহারে উৎসাহিত করে সুস্থায়ী সামুদ্রিক পরিচালনাকে চালিত করছে। ৩০০টিরও বেশি কার্যকরী উদ্যোগের রূপরেখা দিয়ে এই লক্ষ্য অনুমান করে যে স্বাধীনতার শতবর্ষের মধ্যে ভারত বিশ্বের শীর্ষ সামুদ্রিক ও জাহাজ নির্মাণ শক্তিগুলির মধ্যে উঠে আসবে।

এই পরিকল্পনার গতিবেগ এমন সব গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে, যা ভারতের সামুদ্রিক প্রেক্ষাপটকে পুনর্গঠিত করছে। এই যাত্রায় এক ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জিত হয়েছিল ২৫-এর সেপ্টেম্বরে "সমুদ্র সে সমৃদ্ধি - ভারতের সামুদ্রিক ক্ষেত্রের রূপান্তর" অনুষ্ঠানে।

এই অনুষ্ঠানে ২৭-টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যা ৬৬,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মোচন করে এবং ১.৫ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করে। এই চুক্তিগুলি বন্দর পরিকাঠামো, শিপিং, জাহাজ নির্মাণ, সুস্থায়ী পরিবহন, অর্থ এবং ঐতিহ্য - এই সব ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এটি একটি বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক এবং জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য ভারতের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে: ওডিশার বাহুদাতে ১৫০ মিলিয়ন টন প্রতি বছর ক্ষমতা সম্পন্ন একটি গ্রিনফিল্ড বন্দর, যার সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রায় ২১,৫০০ কোটি টাকা। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৯০৮ কোটি টাকা মূল্যের বৈদ্যুতিক ফেরি ব্যবহার করে পাটনার ওয়াটার মেট্রো প্রকল্প এবং বিদেশী ফ্লিটের ওপর নির্ভরতা কমাতে ও ভারতে তৈরি জাহাজকে উৎসাহিত করতে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং তেলের সংক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি কৌশলগত জাহাজ মালিকানার যৌথ উদ্যোগ কোম্পানি।

এর পাশাপাশি, পাঁচটি রাজ্যে জাহাজ নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক, বড় শিপইয়ার্ডগুলিতে বিনিয়োগ, অর্থায়নের চুক্তি এবং গুজরাটের লোথালে জাতীয় সামুদ্রিক ঐতিহ্য কমপ্লেক্সে ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি লাইটহাউস মিউজিয়াম তৈরি হচ্ছে। এই সব উদ্যোগ ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ জাহাজ নির্মাণকারী দেশগুলির মধ্যে স্থান দেওয়ার স্বপ্নকে আরও জোরদার করছে।

নিউ ম্যাঙ্গালোর পোর্ট অথরিটির অধীনে সম্প্রতি আটটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ ক্রুজ গেট তৈরি, এবং ১০৭ কোটি টাকা বিনিয়োগে পিপিপি মডেলে ১৫০ শয্যার একটি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল স্থাপন করা। এই প্রকল্পগুলির উদ্দেশ্য হল ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং কার্যকরী ক্ষমতা বাড়ানো। এই উন্নয়নগুলি একটি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে, যা বাণিজ্য, পর্যটন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতাকে উৎসাহিত করে।

স্বপ্ন থেকে সমুদ্রযাত্রা

ভারত তার বিশাল উপকূলরেখাকে সম্ভাবনার পটচিত্রে পরিণত করছে। ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে দেশটি শুধু বন্দরই তৈরি করছে না, এটি ভবিষ্যৎ তৈরি করছে; লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থান, দক্ষতা এবং এ সুস্থায়ী বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করছে।

সমুদ্র ক্ষেত্রে এক বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে উঠে আসার জন্য এটাই ভারতের সময়। এটি প্রমাণ করছে যে দূরদৃষ্টি, কৌশল এবং সংকল্প ঢেউগুলিকে সমৃদ্ধির পথে পরিণত করতে পারে। জাহাজ চলাচলের যে পথগুলি বিশ্বের তেল ও পণ্য বহন করে, সেখানে ভারত কেবল একজন যাত্রী হিসেবে নয়, ভবিষ্যতের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে-ও তার স্থান সুরক্ষিত করতে বদ্ধপরিকর।

ম্যারিটাইম বা সমুদ্র সম্পর্কিত ক্রিয়াকর্ম অমৃত কাল-ভিশন ২০৪৭-এই যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবুজ বন্দর এবং সুস্থায়ী জাহাজ চলাচল থেকে শুরু করে আধুনিক উন্নততর ব্যবস্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রকল্প পর্যন্ত - ভারত অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে পরিবেশগত দায়বদ্ধতা এবং বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বিত করছে। বিশ্ব যখন স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খল এবং ক্লিন এনার্জি পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন ভারতের সামুদ্রিক ক্ষেত্রটি শুধু জাতীয় স্বার্থ পরিবেশনের জন্য নয়, বরং আগামী দশকগুলিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্রোতকে আকার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

তথ্যসূত্র: 

Ministry of Ports, Shipping and Waterways

https://shipmin.gov.in/sites/default/files/MoPSW%20achievemnts%20and%20initiatives%20of%20FY%202023-24_0.pdf

https://shipmin.gov.in/sites/default/files/Year%20End%20Review%2C%202024%20%28English%20version%29.pdf

https://shipmin.gov.in/content/maritime-india-vision-2030

https://sagarmala.gov.in/sites/default/files/MIV%202030%20Report.pd

https://imw.org.in/

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2080012

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2128329

https://www.pib.gov.in/PressReleseDetail.aspx?PRID=2167305

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2080012

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2179164

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2175547

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2170575

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2160804

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2166156

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2124061

https://www.pib.gov.in/FactsheetDetails.aspx?Id=149248

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2180221

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2171836

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2163161

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2115878

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2179597

https://www.pib.gov.in/PressReleaseIframePage.aspx?PRID=1992273

https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2172488

Press Information Bureau

https://www.pib.gov.in/FactsheetDetails.aspx?Id=149248

https://www.pib.gov.in/PressNoteDetails.aspx?NoteId=154624&ModuleId=3

https://www.pib.gov.in/PressNoteDetails.aspx?id=155540&NoteId=155540&ModuleId=3

PMO

https://www.pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=2168875

See in PDF

 


SSS/AS.....

(Backgrounder ID: 155721) Visitor Counter : 2
Provide suggestions / comments
Link mygov.in
National Portal Of India
STQC Certificate