Technology
ডিজিটাল ভারতে সাইবার অপরাধ দমন
Posted On:
08 OCT 2025 12:01PM
নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর, ২০২৫
“আমি একটি ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সাইবার সুরক্ষা আমাদের জাতীয় সুরক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে”
-প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ
> ৮৬ শতাংশের বাড়িতে এখন ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
> ভারতে সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত ঘটনাবলী ২০২২-এর ১০.২৯ লক্ষ থেকে বেড়ে ২০২৪-এ ২২.৬৮ লক্ষে পৌঁছেছে।
> কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫-২৬-এ সাইবার সুরক্ষায় ৭৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
> সাইবার প্রতারণায় যুক্ত ৯.৪২ লক্ষের বেশি সিম কার্ড এবং ২,৬৩,৩৪৮টি আইএমইআই ব্লক করা হয়েছে।
> সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত সহায়তার জন্য হেল্পলাইন 1930 চালু করা হয়েছে।
ভূমিকা
সাইবার জগতে ভারত এখন বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। দেশের ৮৬ শতাংশের বেশি বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে, দেশে সাইবার প্রতারণার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত দেশে ৩৬.৪৫ লক্ষ টাকার সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
সাইবার প্রতারণার ধরন
বিভিন্নভাবে সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মানুষ। তাই, প্রতারণার ধরন চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাইবার বিপদ
স্পুফিং-এর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতারকরা বিশ্বস্ত সূত্রকে কাজে লাগিয়ে থাকে। একইভাবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ফিশিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতারণা করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ধরনের ই-মেল বা মেসেজের মাধ্যমে মানুষকে প্রলোভিত করা হয়।
ভারতে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই)-এ সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। তাই, প্রতারকরা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে। বিপুল অর্থলাভের প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইন বেটিং অ্যাপ-এর মাধ্যমে মানুষকে প্রলুব্ধ করা হয়। এতে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বেআইনি লেনদেন হয়েছে।
সাইবার প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াইকে জোরদার করতে ২১ আগস্ট, ২০২৫-এ প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫ পাশ করানো হয়েছে।
ভারতের সাইবার সুরক্ষা কাঠামো
ভারতে CyTrain portal –এ ১,০৫,৭৯৬ জন পুলিশ আধিকারিকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮২,৭০৪টির বেশি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।
সাইবার আইন সাইবার জগতকে সুরক্ষিত করছে
সাইবার প্রতারণা বাড়তে থাকায় ভারত সরকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আইন প্রণয়ন করেছে।
> ভারতের সাইবার আইন কাঠামোয় প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০। এতে চুরি, কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রতারণা এবং ক্ষতিকর বা আপত্তিকর ছবির মাধ্যমে প্রতারণার মতো বিষয় রয়েছে।
> তথ্যপ্রযুক্তি (অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা ও ডিজিটাল মিডিয়া আচরণবিধি) নিয়মবিধি, ২০২১-এ সামাজিক মাধ্যম, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং অন্যান্য অনলাইন ব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ করা হয়েছে।
> ডিজিটাল ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান সুরক্ষা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্যের ক্ষেত্রে আইন মেনে চলতে হবে এবং এই আইনে ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯.৪২ লক্ষের বেশি সিম কার্ড এবং ২,৬৩,৩৪৮টি আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) ব্লক করা হয়েছে।
সাইবার প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ভারতের সাইবার সুরক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় সংস্থা হল ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (CERT-In)। সাইবার হুমকি সহ নানা ধরনের অপরাধের ওপর নজরদারির দায়িত্ব রয়েছে এই সংস্থার ওপর। মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত CERT-In ১০৯টি সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত নকল মহড়া চালিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল বিভিন্ন রাজ্যের ১,৪৩৮টি সংগঠনকে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষা
তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ধারা ৭০এ-এর আওতায় ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোটেকশন সেন্টার (এনসিআইআইপিসি) তৈরি করা হয়েছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো রক্ষার ক্ষেত্রে এটি হল মূল সংস্থা। ব্যাঙ্ক, টেলিকম, বিদ্যুৎ এবং পরিবহণের মতো ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় রেখে এটি কাজ করে থাকে।
আইন বলবৎকারী সংস্থাকে শক্তিশালী করা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে গঠিত ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (I4C) সংগঠিতভাবে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত আইন বলবৎ করে থাকে। এই সংস্থাটি এ পর্যন্ত ৩,৯৬২টি Skype ID এবং ৮৩,৬৬৮টি WhatsApp অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে।
সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগসমূহ : প্রশাসনিক পদক্ষেপ
কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫-এ সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্পে ৭৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সিটিজেন ফিনান্সিয়াল সাইবার ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর মাধ্যমে আর্থিক সংস্থাগুলি ১৭.৮২ লক্ষ অভিযোগের ভিত্তিতে ৫,৪৮৯ কোটি টাকা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল
সাইবার অপরাধ দমনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ জোরদার করতে ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (www.cybercrime.gov.in) চালু করেছে সরকার। এই পোর্টালের মাধ্যমে নাগরিকরা সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন। এছাড়া, হেল্পলাইন নম্বর 1930 চালু করা হয়েছে।
ন্যাশনাল মিশন অন ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম (NM-ICPS)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ উন্নত গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সাইবার প্রতারণার ক্ষেত্রে NM-ICPS গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোগত সাইবার প্রতারণা চিহ্নিত ও মোকাবিলা করা হয়ে থাকে।
মহিলা ও শিশুদের ওপর সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে প্রকল্প (CCPWC)
এই প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা দুর্বলতর শ্রেণি, বিশেষত মহিলা ও শিশুদের নিশানা করে থাকে। এই অপরাধ দমনে দেশের ৩৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৩২.৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাইবার ফরেন্সিক-কাম-ট্রেনিং ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়েছে। এইসব ল্যাবরেটরিতে ২৪,৬০০-র বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সমন্বয় প্ল্যাটফর্ম
সাইবার অপরাধের তদন্তকে শক্তিশালী করেছে সমন্বয় প্ল্যাটফর্ম। এর ‘প্রতিবিম্ব’ মডিউল অপরাধীদের স্থান চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। এ পর্যন্ত ১২,৯৮৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১,৫১,৯৮৪টি ক্রিমিনাল যোগসূত্র পাওয়া গেছে এবং ৭০,৫৮৪টি সাইবার তদন্তে সহায়তা করা হয়েছে।
সহযোগ পোর্টাল
এই পোর্টালের মাধ্যমে অবৈধ অনলাইন বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখা হয় এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় তা সরিয়ে ফেলার জন্য দ্রুত নোটিশও প্রদান করা হয়।
সাইবার সুরক্ষা মহড়া
২১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত ভারত ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এক্সারসাইজ ২০২৫ চালানো হয়। এতে সাইবার বিশেষজ্ঞ, নীতি-নির্ধারক সহ ৬০০ জনের বেশি যোগ দেন।
ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস ২০২৫-এ সাইবার সুরক্ষায় নজর
নবম ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেসে সাইবার সুরক্ষার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। ৮-১১ অক্টোবর নতুন দিল্লির যশোভূমিতে এই কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এতে ১.৫ লক্ষের বেশি মানুষ হাজির থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, ৭০০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এবং ৮০০ জনের বেশি বক্তা অংশ নেবেন। ভারতে এখন মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২০ কোটির বেশি এবং ৯৭ কোটি মানুষের ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
অগ্রগতির পথ : সাইবার সচেতনতা
সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করতে সরকার একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। রেডিও, সংবাদপত্র এবং মেট্রোয় ঘোষণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সামাজিক মাধ্যমকেও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপসংহার
ভারত ডিজিটাল পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ডিজিটাল ভারতের ভাবনাকে সামনে রেখে সরকার সাইবার অপরাধ দমনে বহুস্তরীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তথাপি, সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও সাধারণ মানুষকে একযোগে এই অপরাধের মোকাবিলা করতে হবে।
তথ্যসূত্র
Ministry of Statistics & Programme Implementation
Ministry of Electronics & IT
Ministry of Home Affairs
Ministry of Communications
Ministry of Women and Child Development
PIB Backgrounders
World Economic Forum
National Security Council Secretariat
Enforcement Directorate (ED) Annual Reports 2024-2025
India Budget
National Mission on Interdisciplinary Cyber-Physical Systems (NM-ICPS)
Indian Cybercrime Coordination Centre (I4C)
Open Government Data Platform (OGD) India
পিডিএফ দেখতে নিচে ক্লিক করুন –
https://static.pib.gov.in/WriteReadData/specificdocs/documents/2025/oct/doc2025108660701.pdf
SSS/MP/DM
(Backgrounder ID: 155547)
Visitor Counter : 2
Provide suggestions / comments